যে পদ্ধতিতে কোন পাহাড়ের শৃঙ্গগুলো জেগে ওঠে সে পদ্ধতির কারণে শ্বাসভর্তি অক্সিজেন নেয়া সহজ হয়ে যায়। পাহাড়ে শৃঙ্গগুলো মাটি ফুঁড়ে ওপরে ওঠার সময় এমন সব পরিবর্তন ঘটায় যা পরিশেষে অক্সিজেন তৈরিকারী ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীবের পুষ্টি সাধন করে।
পৃথিবীর মহাদেশ তৈরি করতে গিয়ে বিশালাকার মহাদেশীয় প্লেটগুলো এ পর্যন্ত ৭ বার পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। বিপুল শক্তি নিয়ে একে অপরের সাথে ধাক্কা খাওয়ার ফলে মাটি উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। সুউচ্চ পাহাড়গুলি তৈরি হয়েছে এভাবে। হিমালয় পর্বতমালার এভারেস্ট শৃঙ্গ তৈরি হয়েছে দুটি প্লেটের সংঘর্ষের ফলে। মহাদেশীয় সংঘর্ষের পরবর্তী কয়েক মিলিয়ন বৎসরব্যাপী বৃষ্টিপাতে উচ্চ শৃঙ্গগুলি ধুয়ে গেছে। পাহাড়ের শরীর বৃষ্টিতে ভিজে কাদা হয়েছে। ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নেমে সাগরে চলে গেছে। ধুয়ে যাওয়া মাটির সঙ্গে সাগরের জল মিশেছে আয়রণ, ফসফরাসসহ নানারকমের খনিজদ্রব্য। এই দ্রব্যগুলোকে সাগরতলের আনুবীক্ষণিক গাছগুলো খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। উদ্ভিদগুলোর শরীরে খনিজদ্রব্যগুলো হজম হওয়ার সময় তৈরি হয় প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধির পেছনে এই ফটোসিনথেসিস এর গুরুত্ব অপরিসীম। ২.৬৫ বিলিয়ন বৎসর আগে বায়ুমণ্ডলে ধর্তব্যের মধ্যে নয় এমন স্বল্প পরিমাণে অক্সিজেন ছিল। কিন্তু বর্তমানকাল পর্যন্ত তা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ২১ ভাগ। ক্যানবেরাতে অবস্থিত অস্ট্রেলিয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (Australian National University) ভূবিজ্ঞানী আয়ান ক্যাম্পবেল এবং চার্লট অ্যালেন মনে করেন সাগরতলের ঠিক নিচের স্তরে যে পরিমাণ খনিজ দ্রব্য মজুত আছে তার প্রেক্ষিতে বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের পরিমাণ বোঝা যায়। বিভিন্ন মহাদেশীয় সংঘর্ষের সময় সাগরতলের খনিজদ্রব্য ও বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে তারা যথেষ্ঠ প্রমাণ হাতে পান।
তারা বলেন, যেকটি মহাদেশীয় সংযোজনকালীন ঘটনাকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা গেছে, প্রত্যেক পুনর্গঠণ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ঠ পরিমাণের অক্সিজেন বিমুক্ত হয়েছে। ক্যাম্পবেল আরও বলেন - ৪০ মিলিয়ন বৎসর আগে এশিয়া ভূখণ্ডের সাথে ভারতীয় ভূখণ্ড মিলিত হয়ে হিমালয় পর্বতমালা তৈরি করেছে। পরবর্তী বৎসরগুলোতে বর্তমান কাল পর্যন্ত এর ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে গেছে ১৫%।
কেউ কেউ মনে করেন, বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন সরবরাহ করার আরও একাধিক ভৌগলিক উপাদান আছে। এদের মধ্যে প্রধানতম হল আগ্নেয়গিরি। বলা হয় যে, ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনকে পৌঁছে দেয় আগ্নেয়গিরি। কিন্তু ক্যাম্পবেল মনে করেন এই ধারণা সঠিক নয়। আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ অক্সিজেন মুক্ত হয়ে বাতাসে মিশে যাওয়ার কোন প্রমাণ নেই। এমন হলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ আরও বেশি হতো।
জার্মানির সরকারি গবেষণা সংস্থা GeoForschungsZentrum এর Geophysicist রেইনার কাইন্ড বলেন - টেকটোনিক প্লেটগুলো না থাকলে বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব অনেক কম হতো। হয়তো সেখানে একেবারেই কোন অক্সিজেন থাকতো না। এই পৃথিবী তখন দেখতে মঙ্গলগ্রহের মত হতো। এর ফলে জীবনের বিকাশ খুব কঠিন হয়ে পড়তো। হয়তো জীবনের কোন সূচনাই হতো না।
তথ্যসূত্র
Monday, November 17, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 টি মন্তব্য:
Post a Comment
আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।