Saturday, September 20, 2008

আগামী দিনের শক্তি যোগাবে চাঁদের মাটি -২

মূল লেখা: How Lunar Soil Could Power the Future
লেখক: Michael Schirber
সূত্র: লাইভ সাইন্স

হিলিয়ামের উৎসঃ

স্পষ্ট আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও হিলিয়াম-৩কে গবেষকরা বাদ দিয়ে থাকেন। এর একমাত্র কারণ হল পৃথিবীতে এর পরিমাণ খুব কম। পারমাণবিক অস্ত্রের ভিতরে অপ্রয়োজনীয় অবশেষ হিসেবে হিলিয়াম-৩ পাওয়া যায়। আর এর মূল্যও অনেক বেশি। ১ গ্রামের দাম ১০০০ ডলার।

সূর্যের যে আলোক প্রবাহ (Solar Wind/ সৌর ঝড়) সেখান থেকে অনবরত হিলিয়াম-৩ সংগ্রহ করা যেতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়ে সূর্যকণাগুলো ভূপৃষ্ঠে না এসে বহির্জগতে বিকিরিত হয়ে যায়। চাঁদের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দুর্বল হবার কারণে এমনটা ঘটে না। গত ৪-৫ বিলিয়ন বৎসরে চাঁদে ইতিমধ্যেই ১ মিলিয়ন থেকে ৫ মিলিয়ন টন হিলিয়াম-৩ জমা হয়ে গেছে।

এই ভাবনার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথরগুলোতে ১ বিলিয়নে ১০ থেকে ২০ ভাগ পরিমাণে হিলিয়াম-৩ পাওয়া গেছে। নাসা প্রতিষ্ঠিত চাঁদ ও গ্রহগুলো সম্পর্কে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Paul Spudis বলেন -" চাঁদে হিলিয়াম-৩ রয়েছে, কিন্তু খুব কম পরিমাণে। এর অর্থ হল ১ টন হিলিয়াম-৩ পেতে হলে লক্ষ লক্ষ টন মাটিকে পরিশোধন করতে হবে।" প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে হিলিয়াম -৩ পেতে হলে চাঁদের ধূলিকণাকে প্রায় ১৩০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট (৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় পোড়াতে হবে।

চাঁদের মাটি থেকে হিলিয়াম-৩ সংগ্রহ করার সম্ভাব্য রোভারের ডিজাইন। এই রোবট সূর্যের আলোকে বিশালাকার ডিশ আয়না দিয়ে প্রতিফলিত করে মাটিকে উত্তপ্ত করে তুলবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: Credit: University of Wisconsin


কুলসিনস্কি ও তার দল ইতিমধ্যেই একটি যন্ত্রের ডিজাইন দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। এই রোভার নিজে নিজে চাঁদের মাটিকে খামচে তুলে নিয়ে ঘনীভূত সূর্যের আলো দিয়ে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করতে পারবে।
কুলসিনস্কি হিসাব কষে দেখিয়েছেন, এই ধরণের খননকার্য মোট ব্যয় করা শক্তির (চাঁদে যাওয়া আসার শক্তি সহ) চাইতে ৩০০ গুণ বেশি শক্তি আহরণ করতে পারবে। তুলনামূলকভাবে একটি কয়লা খনি তার পিছনে ব্যয় করা মোট শক্তির ১৫-২০ ভাগ বেশি ফিরিয়ে দেয়। তাঁর গবেষকদল সম্ভাব্য খরচ হিসেবে মনে করেন যে চাঁদ থেকে ১ টন হিলিয়াম সংগ্রহ করতে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে। এটা শুনতে অনেক বেশি মনে হয়। কিন্তু তুলনা করলে দেখা যাবে, ১ ব্যারেল গ্যাসোলিনের দাম যেখানে ১০০ ডলার সেখানে সেখানে ১ টন হিলিয়াম-৩ এর মূল্য মাত্র ১০ বিলিয়ন ডলার। কুলসিনস্কি অবশ্য বলেছেন-"আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিলিয়াম সংগ্রহ করা নয়, আমরা শুধু এই তথ্যটা দিতে চাই যে আমরা একে পোড়াতে পারি।"

পোড়ানো সমস্যাঃ
হাইড্রোজেনের আইসোটোপ পোড়ানোর চাইতে হিলিয়াম-৩ পোড়াতে প্রাথমিকভাবে অনেক অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। এজন্য ITER ঠিক এই মুহূর্তে হিলিয়াম-৩ কে সম্ভাব্য জ্বালানী হিসেবে মনে করছে না।

তবে কুলসিনস্কির দল একটি অন্য উপায়কে নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এর নাম IEC, এর মাধ্যমে তারা ফিউসন বিক্রিয়াকে কিভাবে ত্বরান্বিত করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

ITER এর পরিকল্পনা হল চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে উচ্চ তাপমাত্রার প্লাজমা তৈরি করা। কিন্তু IEC বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের (Electric Field) ভিতর দিয়ে পারমাণবিক কণাগুলোকে পরিচালনা করে এই কাজটি করতে চায়।

এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কুলসিনস্কি ও তার সহযোগীরা তাদের প্রাথমিক যন্ত্রটিতে সীমিত মাত্রার নিউক্লিয়ার ফিউসন তৈরি করতে পেরেছেন। EMC2 Fusion কোম্পানীও একই পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে।

তবে IEC এর যাবতীয় প্রস্তাবনা ও উপস্থাপনা এখন পর্যন্ত সরবরাহের চেয়ে কম পরিমাণের শক্তি উৎপাদন করছে। আর একারণ অন্যান্য গবেষকগণ মনে করছেন ফিউসন চুল্লীর জন্য হিলিয়াম-৩ ব্যবহারের ধারণা হয়তো কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।

Paul Spudis তার প্রতিক্রিয়া জানাতেগিয়ে বলেন "কখনো শব্দটি কারও কখনো বলা উচিত নয়। আগামী শতাব্দীগুলোতে শক্তি উৎপাদন করার জন্য হিলিয়াম-৩ হয়ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেবে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হয়তো এখনও আসেনি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আগামীতে সেই সময় আসছে।"

সমাপ্ত

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।