Monday, September 15, 2008

আগামী দিনের শক্তি যোগাবে চাঁদের মাটি

মূল লেখা: How Lunar Soil Could Power the Future
লেখক: Michael Schirber
সূত্র: লাইভ সাইন্স

আগামী দিনগুলোতে চাঁদের গুরুত্ব নতুন করে বেড়ে যাচ্ছে। মহাকাশ যাত্রায় সমর্থ দেশগুলো চাঁদে তাদের নতুন রেলস্টেশন স্থাপন করার চিন্তাভাবনা করছে। এর একমাত্র কারণ হল আগামী দিনের ফিউশন চুল্লীগুলির জন্য খনিজ জ্বালানীর সংগ্রহ।

এক্ষেত্রে জ্বালানী হল হিলিয়াম-৩ (Helium-3)। এটা হিলিয়ামের এক হালকা আইসোটোপ। সাধারণত বেলুন ওড়ানোর কাজে একে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই হিলিয়াম-৩ এর সাথে যদি পারমাণবিক কণার খুব জোরে সংঘর্ষ ঘটানো যায়, তাহলে প্রচলিত পারমাণবিক চুল্লীর চাইতে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন করা যায়। এতে বর্জ্য অংশের পরিমানও তুলনামূলকভাবে কম উৎপন্ন হয়। পরমাণু বিজ্ঞানী জেরাল্ড কুলসিনস্কি বলেন-"যদি আমরা হিলিয়াম-৩ কে পুড়ে যাওয়া দেখাতে পারতাম, তাহলে বোঝানো যেত যে সত্যিই এটা অন্য পারমাণবিক জ্বালানীর চাইতে কতই না নিরাপদ ও কার্যকরী। মাত্র ৪০ টন হিলিয়াম-৩ দিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সারা বৎসরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল পৃথিবীতে আসলে কোন হিলিয়াম-৩ নেই। চাঁদ হল সবচাইতে নিকটবর্তী জায়গা যেখান থেকে এর সরবরাহ পাওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যেই চীন, রাশিয়া এবং ভারত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে পেরেছে। তারা মনে করছে হিলিয়াম-৩ সংগ্রহ করে তারা তাদের চন্দ্রাভিযানের খরচ অনেকাংশে তুলে আনতে পারবে। তবে বিজ্ঞানী কুলসিনস্কি বলেন- "হিলিয়াম-৩ আনার জন্য এখনই কাউকে আমি উৎসাহিত করছি না। তবে আগামীতে আমাদেরকে যে জ্বালানীর সংকটে পড়তে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।"

ফিউশন সমস্যার সমাধানঃ
বর্তমানকালের সবকটি পারমানবিক চুল্লী ফিশন (Fission) ক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। এগুলোতে কোন বড় আকারে পরমাণু কণাকে (যেমন ইউরেনিয়াম) ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এর পরিবর্তিত রূপ হল ফিউশন(Fusion)। এখানে দুটি ছোট পারমানবিক কণাকে (Nuclei) কাছাকাছি নিয়ে এসে একটি বড় কণা তৈরি করা হয়। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। এখন পর্যন্ত কোন বাণিজ্যিক ফিউশন চুল্লী তৈরি করা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি একটা প্রোটোটাইপ চুল্লী (ITER -International Thermonuclear Experimental Reactor) ফ্রান্সের Cadarache এলাকায় চালু করা হয়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রী প্লাজমা (Plasma) তৈরি করার পরিকল্পনা এদের রয়েছে। মূল লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে এমন শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করতে আরও ২০ বৎসর লেগে যাবে।

ITER (International Thermonuclear Experimental Reactor) বা আন্তর্জাতিক পারমানবিক তাপ পরীক্ষণ চুল্লীতে দুইটি হাইড্রোজেন আইসোটোপের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটানো হবে। এই দুটো হল ডিটেরিয়াম (Deuterium) ও ট্রিটিয়াম (tritium)। এখানে বিশেষ সতর্কতার বিষয় হল যে ট্রিটিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ এবং পারমানবিক অস্ত্র তৈরি করতে ব্যবহারকরা হয়। সেজন্য খুব সাবধানে এটাকে নাড়াচাড়া করা দরকার।

এছাড়া আরও একটি সমস্যা যে, ডিটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম এর মধ্যের বিক্রিয়ায় খুব উচ্চ শক্তির পারমানবিক কণার বিকিরণ ঘটে। এই কণাগুলো চুল্লীর দেয়ালে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে কাঠামোর ক্ষতিসাধন করে। ফলে ITER এর দেয়াল প্রত্যেক বছরে বছরে পরিবর্তন করতে হবে। এই সব কারণে কুলসিনস্কি (Kulcinski) এবং তার সহকারীরা ট্রিটিয়াম এর বদলে তেজস্ক্রিয়তাবিহীন হিলিয়াম-৩ ব্যবহার করতে চান।

'সান্তা ফে' তে অবস্থিত EMC2 Fusion কোম্পানীর Rick Nebel বলেন- হিলিয়াম-৩ এর অন্যতম প্রধান সুবিধা হল বিক্রিয়ার সময় এটা অল্প সংখ্যক পারমাণবিক কণা তৈরি করে। ফলে খুব কম পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণ ঘটে। আর এতে সমস্ত যন্ত্রটিও সরল থাকে। এছাড়াও বিক্রিয়ার ফলে যে হিলিয়াম-৩ পাওয়া যায়, তা বিদ্যুতায়িত (Charged) থাকে। ফলে সরাসরি এটাকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা যায়। আলাদা ভাবে জল গরম করে বাষ্প তৈরি করতে হয় না।

অসমাপ্ত

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।