Wednesday, September 10, 2008

বিগব্যাঙ থিয়োরির রহস্য উন্মোচন

LHC এর ভিতরের ছবি
মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটি হল বিগব্যাঙ তত্ত্ব। এই তত্ত্বের কিছু কিছু বিষয় অজানা থেকে গেছে। এছাড়াও মহাবিশ্বের বিভিন্ন রহস্যময় বিষয় রয়েছে যাকে আজও উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি। এই সব নানাকিছু বিষয় নিয়েই আজ একটি বিশেষ পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।

পরীক্ষাটা হচ্ছে সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সের সীমানার কাছাকাছি এলাকায়। মাটির ১০০-১৭৫ মিটার গভীরে ২৭ কি.মি. লম্বা টানেল বসানো হয়েছে। সেখানে বিগব্যাঙের সময়কালের আবহাওয়া তৈরি করা হবে। পদার্থবিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষার মাধ্যমে ম্যাটার, এন্টিম্যাটার, ব্লাকহোল ইত্যাদি সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন।

বিগব্যাঙের সময়ে অর্থাৎ মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুতে চারপাশের চেহারা কেমন ছিল এটা জানার আগ্রহ বিজ্ঞানীদের অনেকদিনের। সেই উৎসুক্যকে তৃপ্ত করতে আয়োজন হয়েছে আজকের এই গবেষণা।ইউরোপের সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের পাশে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাগার রয়েছে। এর নাম CERN বা European Organisation for Nuclear Research। পরমাণু নিয়ে যাবতীয় গবেণার এই গবেষণাগারে স্থাপন করা হয়েছে Large Hadron Collider (LHC)। আজ ১০ সেপ্টেম্বর এই যন্ত্রটিকে চালু করা হবে। এই LHC বা Big Bang Machine এর মধ্যে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকালের অবস্থাকে তৈরি করা হবে। ফলে জন্ম নেবে বিভিন্ন এন্টিম্যাটার, ডার্ক পার্টিকল, ব্লাকহোল ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন এর ফলে কণা পদার্থবিজ্ঞানের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। ভর কি? ডার্ক ম্যাটার কি? অদৃশ্য কিন্তু ভরযুক্ত পদার্থ গুলো কোথায় গেল। সৃষ্টির সময় জন্ম নেয়া এন্টিম্যাটারগুলো এখন নেই কেন?

Large Hadron Collider (LHC) হল এযাবতকালের সবচাইতে বড় কণা নিয়ে গবেষণার যন্ত্র।

মহাবিশ্ব সম্পর্কে গভীরতর প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার জন্য LHC পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাকে ভেঙে ফেলবে। উপরের ছবির মত বিশালাকার (২৭ কি.মি. দৈর্ঘ্য) আংটির মত টানেলে দুটি সোনা(Gold)'র কণাকে ছুড়ে দেয়া হবে। এগুলো এই টানেলের ভিতরে আলোর গতির ৯৯.৯৭% গতিবেগে ছুটবে। পরস্পরকে আঘাত করে সেকেন্ডে ৬০০ মিলিয়ন বার ভেঙে ফেলবে। এর যে ফলাফল তা পর্যবেক্ষণ করবে টানেলের ভিতরে বসানো কিছু যন্ত্র। এই পরীক্ষা প্রতিদিন ৪০,০০০ গিগাবাইট ডাটা তৈরি করবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত সারাবিশ্বের ১০০,০০০ টি কম্পিউটার এই তথ্যকে বিশ্লেষণ করবে। ফ্লাশ দিয়ে তৈরি গোটা ব্যাপারটার একটা চমৎকার সিমুলেশন রয়েছে এই লিংকে

প্রায় ২০ বৎসর ধরে এই পরীক্ষাকার্যের প্রস্তুতি চলেছে। খরচ হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। ৭০টি দেশ থেকে ১০,০০০ বিজ্ঞানীরা তাদের মেধার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটাতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন। চাঁদে এপোলোর অবতরণের পর এই গবেষণাটিকে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে যে এই গবেষণার ফলে মহাবিশ্বের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।

তবে বিরুদ্ধবাদীরাও বসে নেই। তারা বলছেন যে এই গবেষণার ফলে যে ব্লাকহোলের সৃষ্টি হবে, তা মুহূর্তেই এই পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলবে। বিরুদ্ধবাদীদের তৈরি একটি ভিডিও ইউটিউব থেকে নিচে তুলে দিলাম।



প্রথম ভিডিও


দ্বিতীয় ভিডিও
==========
  • বিবিসি এই বিগব্যাঙ নিয়ে গবেষণার বিভিন্ন খবরাখবর তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করার জন্য একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। এখানে কয়েক মিনিট পরপর তথ্য আপডেট করা হচ্ছে।
  • এই লিংকে গিয়ে LHC এর 3D ছবি দেখুন।
  • LHC এর অফিসিয়াল হোমপেজ
  • যারা নিজেদের কম্পিউটার LHC কে ব্যবহার করতে দিয়ে এই বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সহায়তা করতে চান তারা এই ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম রেজিস্ট্রি করুন।

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।