Sunday, April 13, 2008

সেলুলোজে প্রাণ

ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এখান থেকে

এতদিন পর্যন্ত মানুষের খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে পুরনো জৈবিক পদার্থ ছিল এক ধরণের প্রোটিন। প্রায় ৬ কোটি ৮০ লক্ষ বৎসর আগের এই উপাদানটিকে সবচাইতে বয়স্ক প্রাণের উদাহরণ বলে মনে করা হত। এই প্রোটিন পাওয়া গিয়েছিল ভয়ংকর হিংস্র ডাইনোসর টাইরানোসরাক্স রেক্স ডাইনোসরের ফসিলে। কিন্তু এর চেয়েও পুরনো জৈবিক নমুনা পেয়েছেন নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। সেললয়েজের এই সুক্ষ্ম আঁশগুলি ২৫৩ লক্ষ বছরেরও পুরনো। এগুলো পাওয়া গেছে। নিউ মেক্সিকো মরুভূমির এক প্রাচীন লবণ খনি থেকে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আণবিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত বর্জ্যপদার্থগুলো ফেলে দেয়া হয়। মাটির নীচে নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে আণবিক বর্জ্যকে পুতে ফেলা হয়। প্রাগৈতিহাসিক এই সেলুলোজ Cyanobacteria দিয়ে তৈরি। এই নীলাভ সবুজ শৈবাল পৃথিবীর সাগর-স্থলের অনেক জায়গায় এখনও পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এরা পৃথিবীতে ২.৮ বিলিয়ন বছর থেকে আছে।

এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদেরকে একটি ভিন্ন সম্ভাবনার আশা দিয়েছে। নাসার ওডেসি নামক মহাকাশ যান মঙ্গল গ্রহে প্রচুর লবনের সন্ধান দিয়েছে। এই আবিষ্কারকে মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা খুঁজে পাবার প্রত্যাশা বাতিল করে দিতে পারছেন না। সেলুলোজের আঁশগুলোর আবিষ্কারক ড. গ্রিফিথ বরেন - মঙ্গলগ্রহে প্রাণের প্রমাণ খুঁজতে হলে সেলুলোজের মধ্যে খুঁজতে হবে। ব্যাকটেরিয়া বা গাছপালা খুঁজে লাভ নেই। লবণের স্তুপের মধ্যে সেলুলোজ খুঁজতে হবে। তাহলে যদি প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেলেও যেতে পারে। ডিএনএ'র চাইতে সেলুলোজ অনেক বেশি টেকসই। বাহ্যিক বিভিন্ন অনুঘটক দ্বারা সহজে প্রভাবিত হয় না। রেডিয়েশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা ডিএনএ'র চাইতে অনেক বেশি। মহাকাশের বিরূপ আবহাওয়াতেও যদি এরকম দৃঢ়তা বজায় থাকে তাহলে সেলুলোজ এর মধ্যেই প্রাণের চিহ্ন পাওয়া যাবে।

গ্রিফিত এই লবণের নমুনা মাটির ২০০০ ফুট নিচ থেকে সংগ্রহ করেছেন। তরল লবণ ও কেলাসিত লবণের কণাগুলো যখন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে তিনি পরীক্ষা করছিলেন তখন বিষয়টি ধরা পরে। তারা অনেক সেলুলোজের আঁশ অটুট অবস্থায় খুজে পান। সেলুলোজের আঁশগুলোর ব্যাস ৫ ন্যানোমিটার। অসংখ্য আঁশ পরস্পরকে জড়িয়ে জট পাকিয়ে আছে। কোন কোনটা দড়ির মত কোনটা আবার মাদুরের মত। গ্রিফিত বলেন- সময়ের দাগ সেলুলোজগুলো গ্রহণ করেনি। ঠিক টাটকা সেলুলোজের মতো ছিল সজীব। এটা দেখতে সেলুলোজের মত, আচরণও করছিল সেলুলোজের মত। বর্তমানকালের সেলুলোজের মত একই এনজাইম দিয়ে তৈরি। তিনি আরও বলেন -ওই লবণের মধ্যে আমরা কিছু ডিএনএ খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু পরিমাণে ছিল অনেক কম।

মহাকাশ গবেষণায় মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা একটি বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। মানুষ বহু আগে থেকে সৌরজগতের এই লাল গ্রহটিকে চিনতো। তার সম্পর্কে বিভিন্নরকম কৌতুহল এই আধুনিক যুগে এসেও মেটেনি। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী মঙ্গলগ্রহে পাওয়া লবণগুলো ৩.৫ থেকে ৩.৯ বিলিয়ন বছর আগের। স্বভাবগতভাবে লবণের খনি সবসময়ই জলের উপস্থিতির কথা বলে। সে হিসেবে যখন জল ছিল তখন সেখানে নিশ্চয় প্রাণের উপস্থিতিও ছিল। গ্রিফিনের মতে- সবচেয়ে প্রাচীন প্রাণ বলতে আসলে এক ধরণের গ্লুকোজকে (Polymerizing Glucose) বোঝানো হয়। জীবন তখনও কার্বন অবস্থায় ছিল। সেলুলোজের অন্তরালে ছিল তাদের আশ্রয়। ব্যাকটেরিয়া সেলুলজকে নিজেদের বাড়ির মত মনে করে। তার চারপাশ ঘিরে থাকে। গাছের কাঠামোর প্রধান উপাদান হল সেলুলোজ। কীটপতঙ্গ নিজেদের সেলুলোজের অবয়ব কিছুটা হলেও পাল্টাতে পারে। অর্থাৎ সেলুলোজ প্রাণের অন্যতম একটি উপাদান। আর তাই কোথাও তা সে মঙ্গলগ্রহ হোক আর মহাবিশ্বের যেকোন জায়গাতেই হোক না কেন গ্রিফিথ মনে করেন প্রাণ খুঁজতে হলে সেলুলোজের বুক উন্মোচন ছাড়া গত্যন্তর নেই।

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।