Friday, March 28, 2008

সৃষ্টির সূত্র: গালাপাগস দ্বীপ

সুশান্ত বর্মন

সারা পৃথিবীর দুই ভাগ জল ও এক ভাগ স্থলএই বিশাল জলরাশির বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য দ্বীপ খুঁজে পাওয়া যায়এগুলোর কোনটি রাজনৈতিকভাবে আবার কোনটা অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণকিন্তু কিছু কিছু দ্বী বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে যে অবদান রেখে গেছে তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয়গালাপাগস তেমনি একটি দ্বীপপুঞ্জএই দ্বীপমালায় প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক চার্লস ডারউইন কয়েকমাস থেকেছেনবিস্ময়কর ও রহস্যময় অসংখ্য পশুপাখিতে পরিপূর্ণ দ্বীপগুলোতে ভ্রমণ করে ডারউইন প্রাণী সৃষ্টি ও বিকাশের সূত্রটি খুঁজে পেয়েছেনএই দ্বীপের বিভিন্নরকম প্রাণী নিজেদের নানারকম বৈচিত্র্য ডারউইনের কাছে তুলে ধরে প্রমাণ করেছে মানুষ পতনের ফল ন; উৎকর্ষের ফল

অদ্ভূত ধরণের প্রাণী দিয়ে পূর্ণ এই দ্বীপমালার কথা প্রথম জানা যায় ১৫৩৫ সালেফ্রে টমাস নামে একজন খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারকারী জাহাজে করে পেরু যাচ্ছিলেনপথে বেশ কিছু দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপপুঞ্জের দেখা পেলেনসেখানে তিনি অনেক অদ্ভূত অদ্ভূত গাছপালা ও প্রাণী দেখলেনতিনি দেখলেন এই দ্বীপমালার প্রাণীজগতের বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের প্রাণীদের চাইতে একেবারে আলাদা রকমতিনি সেখানে বিদঘুটে ডিজাইনের গিরগিটি, বিশাল বিশাল কচ্ছপ, বিভিন্ন ধরণের ঠোঁটওয়ালা একই জাতের পাখি, কাঁটাওয়ালা নাশপাতি গাছ ইত্যাদি দেখতে পেলেনতাঁর সহ জাহাজের সবার দৃষ্টি কেড়েছিলো কচ্ছপগুলোএগুলোর সাইজ এত বিরাট যে কয়েকজন মানুষকে পিঠে নিয়ে চলাফেরা করা এদের কাছে কোন ব্যপার নয়পরম আনন্দে তারা মাংসের জন্য জাহাজ ভর্তি করে কচ্ছপ নিয়ে নিলোদ্বীপগুলোর নাম রাখলেন গালাপাগসস্পানিস ভাষায় গালাপাগস অর্থ কচ্ছপপ্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপটিতে এমন কিছু বিচিত্র প্রাণীর নমুনা রয়েছে যা পৃথিবীর আর অন্য কোথাও নেইঅন্য কোন দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথেও গালাপাগস দ্বীপমালার পরিবেশ মেলেনাসারা বছর প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা এই দ্বীপে থেকে গবেষণা করেনপ্রকৃতি বিজ্ঞানীদের কাছে স্বর্গসদৃশ এই দ্বীপ ৬৫টি ছোট ও ১৩টি প্রধান দ্বীপ নিয়ে গঠিতসবচাইতে বড়টির নাম ইসাবেলাএছাড়াও আছে ফার্নান্দেজ, সান্টিয়াগো, মারচনাপিন্টা, জোনো, ভেসা, পিনজোন ইত্যাদি নামের দ্বীপগালাপাগস দ্বীপে অনেক রকমের পাথর ও জীবাশ্ম (Fossil) পাওয়া গেছেএগুলোর C12 পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বোঝা যায় দ্বীপটি গঠিত হয়েছে ৩৫ লক্ষ বছর আগেসমস্ত দ্বীপটি আসলে একটি বড় পাহাড় দিয়ে গঠিতএখানে বেশ কয়েকটি মৃত আগ্নেয়গিরি রয়েছেএই আগ্নেয়গিরিগুলির লাভা উদগীরণের ফলে দ্বীপগুলোর সৃষ্টি হআবহাওয়া প্রায় শুকনোবছরের অনেক সময় খরা থাকেহঠাৎ হঠাৎ সেখানে বৃষ্টি হয়সেখানকার স্পানিস লোকেরা এই হঠাৎ বৃষ্টির নাম দিয়েছে 'এল নিনো'। বৃষ্টির পরপর দ্বীপমালার চিত্র দ্রুত পাল্টে যায়চারিদিক সবুজ ঘাসে ভরে যায়, রুক্ষ্ম পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটি বন্য ফুল ফুটে থাকেপাখিরা ছড়িয়ে পড়ে সারা দ্বীপেদ্বীপমালাটির আবহাওয়া ও ভূমি কিছুটা রুক্ষ্ম হলেও সেখানে প্রাকৃতিক দৃশ্য ও প্রাণীজ বৈচিত্রের কোন কমতি নেইস্থলভূমিতে দেখা যায় অনেক রকমের পাখিটিয়ে, কাকাতুয়াসহ বিভিন্ন রকমের পাখি; বিশাল সাইজের টিকটিকি জাতীয় প্রাণী ও ছোট ছোট প্রাণী রয়েছে এই দ্বীপটিতেতবে ডাঙ্গার তুলনায় গালাপাগস দ্বীপের জলজ প্রাণীরা অধিকতর বৈচিত্র্যময়দ্বীপটি বিষুব অঞ্চলীয় হলেও সেখানে সীল রয়েছে প্রচুরএছাড়া রয়েছে উড়ুক্কু মাছ, বিভিন্ন ধরণের হাঙর, কয়েক রকমের তিমি, বিভিন্ন জাতের অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য মাছগালাপাগস দ্বীপের সবচাইতে রাজকীয় প্রাণীটি হলো কচ্ছপগালাপাগস দ্বীপমালার প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায় বিশাল বিশাল সব কচ্ছপ পাশ দিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ জাহাজযাত্রীরা এই এলাকায় এসে প্রাচীনকাল থেকে এই কিছুকাল আগে পর্যন্ত কচ্ছপ শিকার করে নিয়ে যেতোএছাড়াও এই দ্বীপটিতে রয়েছে বিশাল বিশাল আকৃতির শুকরসাধারণ শুকরের আকার যেখানে সর্বোচ্চ ৫/৬ মন হয় সেখানে এই শুকরগুলোর ওজন হয় ৮/১০ মনখাদ্য হিসেবে কচ্ছপের পাশাপাশি শুকরগুলির চাহিদা এখনও খুব রয়েছে

কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করার পর পায় ৫০/৬০ বছর পরে গালাপাগস দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার হয়তারপর থেকেই লোভী ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি পড়লো এই দ্বীপগুলোর উপরতারা দলে দলে এখানে এসে নির্বিচারে তিমি, সীল, কচ্ছপ, শুকর শিকার করতে লাগলোফলে কয়েকশ বছরের মধ্যেই দ্বীপটির পরিবেশের ভারসাম্য অনেকটা বিনষ্ট হয়ে গেলো১৮ শতকেই মূলত এ অঞ্চলে প্রচুর তিমি ও সিল নিধন করা হয়েছেদক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর এই তিনশ বর্গকিলোমিটার জায়গা ব্যপী বিস্তৃত গালাপাগস দ্বীপপুঞ্জের মালিকইকুয়েডর সরকার মূল ভূখন্ড থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরের এই দ্বীপমালাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে বিষ্ময়কর প্রাণীগুলোকে সংরক্ষণের অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।