অমর বিজ্ঞানী এডিসন
সুশান্ত বর্মন
সুশান্ত বর্মন
১৮৫৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। আমেরিকার ওহিও রাজ্যের মিলান শহর। পরপর একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান মারা যাবার পর জন্ম নিল একটি পুত্র সন্তান। এডিসন শ্যামুয়েল নামক কাঠ ব্যবসায়ীর ঘরে। নাম তাঁর টমাস অ্যালভা এডিসন। ডাক নাম অ্যাল। পৃথিবীর অন্যান্য শিশুদের মতো হৈ হুল্লোড় আনন্দ উল্লাস তিনিও করেছে, অন্যদের মতো পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে একচোখ প্রশ্ন তাঁরও ছিল; মাতা পিতাকে অনবরত কেন কি ইত্যাদি প্রশ্ন করে জ্বালিয়েছেন। কিন্তু অন্য শিশুদের মতো পিতামাতার মনগড়া উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট থাকেননি। নিজে নিজে উত্তর খোঁজার প্রবল আগ্রহে দশ বছর বয়সেই তিনি বাড়ির সেলারে (মাটির নীচের ঘর) তৈরি করেছিলেন। সেখানে বসে রাজ্যের জিনিস নিয়ে অনবরত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যেতেন। রসায়ন শাস্ত্রের প্রতি এডিসনের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা ছিল। তাই তাঁর ল্যাবরেটরিতে দুইশরও বেশি বোতলে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ভরা ছিল, প্রত্যেকটার গায়ে এডিসন সযতনে কাগজে নাম লিখে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ল্যাবরেটরিতে আর ছিল বই। তিনি নয় বছর বয়সেই এমন সব বই পড়েছিলেন যা বড়রাও পড়তে ভয় পায়। যেমনঃ হিউম এর ‘ইংল্যান্ডের ইতিহাস’, গিবন এর ‘রোম সাম্রাজ্যের ইতিহাস’, ফ্রেসিলিয়াস এর ‘কোরলেটিভ আনালাসিস’, সিয়ার এর ‘পৃথিবীর ইতিহাস’, ‘বিজ্ঞানের অভিধান’, ‘স্কুল অব ন্যাচারাল ফিজিক্স’ ইত্যাদি। ক্রমাগত গ্রন্থপাঠে তিনি বুঝে নিতে চেয়েছেন তাঁর কৌতুহলী মনে উন্মেষ হওয়া বিভিন্ন প্রশ্নের। নিউটনের লেখা ‘প্রিন্সিপিয়া’ বইটিও এডিসন প্রতিদিন একটু একটু করে পড়তেন, বোঝার চেষ্টা করতেন এর উচ্চতর গণিত বিষয়ক বিভিন্ন সূত্রগুলো। তবে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ফ্যারাডের মতো তিনিও অংকে নিতান্ত কাঁচা ছিলেন। বাবা চাইতেন ছেলে সাহিত্যিক হোক। তাই সেকালের বিভিন্ন রুচিশীল সাহিত্যের বই তিনি নিয়মিত ছেলের জন্য নিয়ে আসতেন। অতটুকু ছেলের সাথে সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করতেন। তবে এডিসনের সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় ছিল বিজ্ঞান বিশেষ করে রসায়ন। তবে সে সময় বিদ্যুত প্রথম আবিষ্কার হয়। তাই এডিসন বিদ্যুত আবিষ্কারের শৈশব অবস্থা থেকেই তাকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে বিদ্যুত সম্পর্কিত বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারে তিনি বেশি সফল হয়েছিলেন। ভূগর্ভস্থ ল্যাবরেটরিতে বসে বিভিন্ন বইয়ে লেখা বিবরণ পড়ে এডিসন চেষ্টা করতেন নতুন কিছু বানাবার। একটি বইয়ে তিনি পড়েছিলেন বেলুনে গ্যাস ভর্তি করলে তা আকাশে ওড়ে। তিনি ভাবলেন তাহলে তো মানুষের ভিতরে গ্যাস ভর্তি করে দিলে মানুষও আকাশে উড়বে। যেই ভাবা সেই কাজ। কাজের ছেলে মাইকেল ওটসকে এডিসন ডাকলেন। একটি বোতলে সিডলিজ পাউডার ছিল। এডিসন ভেবেছিলেন ঐ পাউডার দিয়ে হয়তো অনেক গ্যাস তৈরি হবে। তাই মাইকেল ওটসকে সিডলিজ পাউডার সবটুকু খাইয়ে দিলেন। ওটস এর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলেও সে উড়তে পারেনি। আরেকবার একটি মুরগীকে ডিমে তা দিতে দেখে এডিসন ভাবলেন তিনিও ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারবেন। হঠাৎ একদিন এডিসন উধাও হয়ে গেলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া গেল গোয়াল ঘরের একপাশে। সেখানে তিনি অনেকগুলো ডিমের ওপর বসেতা দিচ্ছিলেন।
এমনি মজার কিন্তু অনুসন্ধিৎসু গবেষণা নিয়েই এডিসন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিলেন। নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে তিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করছিলেন। তার প্রথম আবিষ্কার এর সাথে বাংলাদেশের অবস্থার একটি দারুণ মিল আছে। একুশ বছর বয়সে এডিসন একটি ভোট রেকর্ডার যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এতে ভোটাভোটি নিজে থেকেই লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। এডিসন রাজধানী ওয়াশিংটনে যন্ত্রটিকে নিয়ে এলেন। সেখানে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দেখালেন। তাঁরা সবাই যন্ত্রটির খুব প্রশংসা করলেন এবং এডিসনকে এমন করিৎকর্মা যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য ধন্যবাদ জানালেন। কিন্তু যন্ত্রটি তাঁরা কিনলেন না। কারণ হিসাবে বললেন- “এ যন্ত্রটি আমাদের কোন কাজেই আসবে না। কেননা ভোট দেয়া নিয়ে হাঙ্গামা, গণ্ডগোল, গোলযোগ, গোলমাল, ঝগড়াঝাঁটি করাই আইনসভার লক্ষ্য, বিনা ঝামেলায় ভোট নেয়া নয়।” এমন অদ্ভূত কারণে তাঁর আবিষ্কারটি গৃহীত হলো না দেখে এডিসন মনোক্ষুন্ন হলেও নিরুৎসাহিত হয়ে যাননি। তিনি জানতের রাজনীতিকরা এমনই হয়।
পিতার কাছ থেকে এডিসন যা হাতখরচ পেতেন তাতে তাঁর ল্যাবরেটরির খরচ যোগানো কঠিন হয়ে যেতো, তাই তিনি শুরু করলেন ফেরি করা। ট্রেনে ফেরি করে তিনি বাদাম, চকলেট ইত্যাদি বিক্রি করতেন। পরে শুরু করেন সংবাদপত্র বিক্রি করা। সমসাময়িক সময়ে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ চলছিলো। খবরের চাহিদা বেশি হওয়ায় নিজেই একটি পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করলেন। নাম দিলেন হেরাল্ড। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি এই কাজ শুরু করেন। সে কাগজে দুচারটি বানান ভুল, বাক্য ভুল থাকলেও কাগজটি ভালই চলেছিল। যুদ্ধের তাজা খবর, স্থানীয় খবর, গুজব ইত্যাদি প্রকাশ করতেন তিনি। তাই সেসময় কাগজটি খুব বিক্রি হচ্ছিল। অনেক টাকা লাভ হলেও এডিসনের হাত প্রায়ই খালি থাকতো। ল্যাবরেটরিতে গবেষণা ও বই কেনার পিছনেই তাঁর বেশিরভাগ টাকা খরচ হয়ে যেতো। রেলে খবরের কাগজ বিক্রি করতে গিয়ে তিনি দেখলেন একটি খালি কামরা অব্যবহৃত পড়ে আছে। তখন সেটাকেই তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিজের ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর করলেন। এখানে কাজ করতে করতেই তিনি বিদ্যুৎ শক্তি সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। বিদ্যুৎ সম্পর্কে কৌতুহল তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল সমৃদ্ধি ও সাফল্যের চূড়ায়।
সেসময় নতুন আবিষ্কার হওয়া টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটা ত্রুটি ছিল। বহুদূরের দুই টেলিগ্রাফ কেন্দ্রের মাঝখানে যে কেন্দ্রগুলি ছিল সেগুলি আর দিক থেকে পাঠানো খবর গ্রহণ করতে ও তাতে পরিবর্তন করতে পারতো। ফলে গোপনীয়তা বলতে কিছু থাকতো না। এডিসন এই ত্রুটিটি ঠিক করে দিয়েছিলেন। সেকালে টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটি তার দিয়ে একটি খবরই পাঠানো যেতো। এডিসন একসাথে অনেকগুলো খবর বিকৃতি ছাড়া পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। টেলিগ্রাফ সম্পর্কিত গবেষণা করতে করতে তিনি পাশাপাশি আরও কয়েকটি নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এরকমই একটি যন্ত্রের নাম ‘রেমিংটন টাইপরাইটার’। কিছুদিন পর আবিষ্কার করেন ‘মিলিওগ্রাফ’ নামের একটি যন্ত্র। এটি দিয়ে টাইপরাইটার বা হাতে লেখা চিঠি যত ইচ্ছা তত কপি করা যায়।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের আবিষ্কার করা টেলিফোনে কথা খুব অস্পষ্ট শোনা যেতো। এডিসন কার্বন রিসিভার ও ট্রান্সমিটার আবিষ্কার করে এই ত্র“টি ঠিক করে দেন। সমসাময়িক সময়েই তিনি আবিষ্কার করেন ‘ফনোগ্রাফ’ নামক যন্ত্রটি। একটি ডায়াফ্রেমের সামনে কথা বললে সেটি কাঁপতে থাকে। এই কাঁপুনি একটি সুই দ্বারা নিচে রাখা ঘুর্ণায়মান মোমের সিলিন্ডারে দাগ ফেলতে থাকে। পরে সিলিন্ডারটি আবার প্রথম থেকে ঘোরালে ডায়াফ্রেমে পূর্বে উচ্চারিত কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যায়। আধুনিক সিডি প্লেয়ারের এই প্রাথমিক ও সরল যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে এডিসনকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। সবচেয়ে মজার ঘটনাটি ঘটেছিল এর প্রদর্শণ অনুষ্ঠানে। হলভর্তি লোকের সামনে যন্ত্রটি যখন এডিসনের প্রিয় কবিতা “মেরি হ্যাড এ লিটিল ল্যাম্ব” কবিতাটি আবৃতি করছিল তখন বিজ্ঞানে অবিশ্বাসী এক ব্যক্তি হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়লো। মঞ্চে উঠে এডিসনের গলা চেপে ধরে বললো- ‘এই প্রতারকের গলা থেকে শব্দ বেরোচ্ছে’। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে যন্ত্রটি তখনও কবিতা আবৃতি করে যাচ্ছিল।
এডিসনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আবিষ্কার হল বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার। আকাশের বিদ্যুতকে মানুষ তখন ব্যাটারিতে আটকাতে পেরেছিলো। তারপরও কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে তা থেকে আলো পাওয়া সম্ভব। এডিসন নিজ মেধা ও প্রচেষ্টায় সেই অলৌকিকতাকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে অক্টোবর মাসে তিনি স্থানীয় পার্ক বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন। আধুনিক যুগের সিনেমার আবিষ্কারকও ছিলেন তিনি। ১৮৯৭ সালের ২৭ এপ্রিল নিউইয়ের্কে হাজার হাজার দর্শকের সামনে এডিসন তাঁর ‘কাইনেটোস্টোপ’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে চলমান ছবি দেখিয়েছিলেন। শিল্প জগতে জন্ম দিয়েছেন নতুন একটি যুগের। তিনি সিমেন্ট, আধুনিক সহজে বহনযোগ্য ব্যাটারি, রাবার ইত্যাদি আবিষ্কার করেছেন।
পেটেন্ট অফিস থেকে জানা যায় এডিসন তাঁর সারাজীবনে মোট ১৪০০ যন্ত্রের জন্য পেটেন্ট নিয়েছেন। এ থেকেই তাঁর প্রতিভার বিস্তৃতির পরিমাপ আন্দাজ করা যায়। কোন একটি নতুন আইডিয়া মাথায় এলে তিনি তার পিছনে নিষ্ঠার সাথে লেগে থাকতেন। অনবরত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সাফল্যকে স্পর্শ করতে চাইতেন। তাঁর অধ্যবসায়ের শক্তি সম্পর্কে দুটি ঘটনা উল্লেখ করা যথেষ্ঠ। হেনরী ফোর্ড সে সময় মোটর গাড়ি আবিষ্কার করেছেন। এই গাড়িতে সহজে পরিবহনযোগ্য নিরাপদ ব্যাটারির প্রয়োজন। এজন্য তিনি বন্ধু এডিসনকে অনুরোধ করেন। এডিসন নতুন ধরনের ব্যাটারি আবিষ্কারের নেশায় সব কাজ ছেড়ে এদিকে মনোযোগ দিলেন। একটি হালকা, টেকসই, সহজে বহনযোগ্য, নিরাপদ ব্যাটারির জন্য তিনি ৫০ হাজার বার পরীক্ষা করেন। তারপর আবিষ্কার করেন তার সাফল্য। তাঁর প্রথম জ্বলা বৈদ্যুতিক বাতিটির ফিলামেন্ট ছিল সুতার তৈরি। এটি একনাগাড়ে ৫০ ঘন্টা জ্বলেছিলো। এরপর যথার্থ উপাদানের জন্য তিনি হাতের কাছে যা পাওয়া গেছে তাকেই কাজে লাগানোর চেষ্ট করেছিলেন। টিস্যু কাগজ, ড্রয়িং কাগজ, আলকাতরা আর ভুষাকালি মাখানো সুতো, মাছ ধরার সুতো, কাঠের টুকরো, নারকেলের ছিবড়ে, প্রদীপের সলতে কিছুই বাদ দেননি। বৈদ্যুতিক বাতিতে ফিলমেন্ট হিসাবে জ্বলার জন্য একটি যথার্থ উপাদানের খোঁজে তিনি কয়েকবছর ধরে নিরলস অন্বেষণ চালিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর সুমাত্রার বাঁশের আঁশকে কাজে লাগাতে পেরেছেন। পরবর্তীতে অবশ্য ট্যাংস্টেন নামক ধাতু দিয়ে ফিলামেন্ট তৈরি করে তিনি বেশ সাফল্য পেয়েছিলেন। অধ্যবসায়ী এডিসন পরাজয় কাকে বলে তা চিনতে শেখেননি। পরবর্তী সফল জীবনে বিভিন্ন জায়গার ভাষণে তিনি একটা কথাই বারবার বলতেন- “প্রতিভার ষোল আনার চৌদ্দ আনাই হল পরিশ্রম, বাকী দু আনা প্রেরণা।” তিনি ২৪ ঘন্টায় ৪ ঘন্টার বেশি ঘুমাতেন না। তিনি বলতেন- “আমরা খুব বেশি ঘুমাই। এত ঘুম আমাদের ক্ষতি ছাড়া লাভের কারণ হয় না।”
শৈশবে এডিসন ‘বোকা’ উপাধি পেয়েছিলেন বন্ধু, শিক্ষক, পরিবারের কাছ থেকে এবং পড়াশোনায় বিশেষ করে অংকে খুবই কাঁচা ছিলেন। স্কুলে শিক্ষক ও ছাত্ররা এনিয়ে তাঁকে পরিহাস করলে তিনি বাড়িতে ফিরে এসে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতেন। তাঁর মামাতো বোন পরবর্তীকালে বলেছিলেন- “অ্যাল খুব শান্ত সুবোধ ছিল। কিন্তু যখন গোঁ ধরতো তখন আর কোন কথাই তাকে শোনানো যেতো না। তাকে আমি খুব মারতাম। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশ ভাবও হয়েছিল।”
এডিসন পড়া ও পড়ার বাইরে পছন্দ করতেন থিয়েটার দেখা ও দেশ ভ্রমণ। অল্প বয়স থেকেই এডিসন পড়ার প্রতি যে আগ্রহ নিজের ভেতরে বোধ করেছেন তা থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। কিন্তু এ কারণে তাঁকে অনেকে হিংসা করতো। এডিসন অল্পবয়সেই মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার যে চিত্র তুলে ধরেছিলেন তা অনেকেই ঈর্ষাবশত সহ্য করতে পারেননি। এডিসনের সহকর্মী মিলটন অ্যাডামস বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াতেন- “অ্যালের পোষাক পরিচ্ছদ নোংরা ও ছোঁড়া ছিল, নিয়মিত স্নান করতো না। নাকটা উঁচু, চোখেমুখে সর্বদাই নেপোলিয়নের মত একটা ভাব।” যে এডিসন সম্পর্কে তাঁর সহকর্মীরা এমন নিন্দা করে বেড়াতো সেই তিনিই পরবর্তী জীবনে ভূষিত হয়েছিলেন বিভিন্ন সম্মানে। ১৯২১ সালে তাঁর ৭৫ বছর পূর্ণ হয়। নিউইয়র্কের টাইমস পত্রিকা আমেরিকার মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি কে তা যাচাইয়ের জন্য একটি জরীপ করে। ফলাফল অনুসারে দেখা যায় সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি ‘টমাস অ্যালভা এডিসন’। ফ্রান্সে তাঁকে দেয়া হয় ‘কমান্ডার অব লিজিয়ন অনার্স’ উপাধি, ইতালিতে তাকে ‘কাউন্ট’ উপাধি দেয়া হয়। তাঁর নিজদেশ আমেরিকায় তিনি দেশসেবার জন্য স্বর্ণপদসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন বহু সম্মানজনক উপাধিতে। সরকার এডিসনের ছবি ও তাঁর আবিষ্কৃত প্রথম বৈদ্যুতিক বাল্বের ছবি দিয়ে ডাক টিকিট বের করেছিলেন। এই অমর বিজ্ঞানী সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট হুভার বলেছিলে-Ñ “ মি. এডিসন স্বীয় প্রতিভা আর প্রচেষ্টার বলে গৌরবের উচ্চশিখরে আহরণ করেছেন। আর দশজন মানুষের মতই তিনি সাধারণ ভাবে জীবন যাত্রা শুরু করে আজ সমাজের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তি। এডিসনের জীবন অধ্যাবসায় এবং ধৈয্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
মহান বিজ্ঞানী এডিসন মারা যান ১৯৩১ সালের ১৭ অক্টোবর। সমাপ্ত ঘটে একটি নিরলস প্রচেষ্টায় গাঁথা কর্মবহুল জীবনের। পৃথিবীতে রেখে যান অসংখ্য আবিষ্কার যা তাঁকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখবে। পৃথিবীর অগ্রগতিতে তার অবদান বেঁচে থাকবে মানুষের বয়সে।
0 টি মন্তব্য:
Post a Comment
আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।