Wednesday, July 16, 2008

সোনালি সিংহ ট্যামারিন

Lion Tamarins
Family: Callitrichidae (L. rosalia)

ট্যামারিন (Tamarin) এর আরেক নাম মারমোসেট (Marmoset)। স্থানীয়রা এদেরকে mico-leão নামে ডেকে থাকে। এদের বাস দক্ষিণ মধ্য আমেরিকার কোস্টারিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত। আমাজন নদীর মোহনা এবং বলিভিয়ার উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত এদের দেখা যায়। এদের গায়ের রঙ বিভিন্ন রঙের হতে পারে। কালো, গাঢ় কালো, কালোর বিভিন্ন মিশ্রণ, বাদামী ও সাদা বিভিন্ন রঙের ট্যামারিন দেখা গেছে। বিভিন্ন প্রজাতির লম্বা লম্বা গোঁফ আছে। ট্যামারিন গোষ্ঠির সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রজাতি হল সোনালী সিংহ ট্যামারিন (Golden Lion Tamarin)।

এই ট্যামারিনের সমস্ত গায়ে হালকা কমলা থেকে সোনালী রঙের লোম রয়েছে। মাথার গাঢ় সোনালী চুলগুলো বেশ লম্বা। পায়ে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরার উপযোগী লম্বা শক্ত নখ রয়েছে। সিংহের মত গলাভরা কেশর আছে বলে এদেরকে সিংহ ট্যামারিন বলা হয়।

কাঠবেড়ালীর চেয়ে একটু বড় এই ট্যামারিনদের শরীরের আকার প্রায় ৩৩৫ মিলিমিটার (১৩.২ ইঞ্চি) লম্বা আর বাহারী লেজটা লম্বায় ৪০০ মি.মি. (১৬ ইঞ্চি)। পুরুষরা ওজনে প্রায় ৭০০ গ্রাম। বন্য অবস্থায় অবস্থায় অবশ্য এর চাইতে বেশি ওজনের ট্যামারিন পাওয়া গেছে। সাধারণত স্ত্রী ট্যামারিন ওজনে ৫৫০ গ্রাম হয়, কিন্তু গর্ভবতীদের ওজন ৭৯০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বর্তমানে একমাত্র ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও (Rio de Janeiro) প্রদেশের এক সংরক্ষিত বনভূমিতে এদেরকে প্রাকৃতিক অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এরা প্রথম বিপন্ন হিসেবে ১৯৮২ সালে তালিকাভূক্ত হয়। ১৯৯৬ সালের দিকে এরা আশংকাজনকভাবে বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় পৌঁছে যায়। একসময় আটলান্টিকের পূর্ব উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যদেশ পর্যন্ত চষে বেড়াত। এই এলাকার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ছিল এদের বাসস্থান। কিন্তু নির্বিচার গাছ কাটার ফলে এদের বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। কৃষি ও মানুষের বাসস্থানের জন্য তাদের প্রিয় বাসভূমির ৯০% ভাগেরও বেশি এলাকার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে এদের প্রাকৃতিক বাসভূমির মাত্র ২% ভাগ অবশিষ্ট আছে।

এরা সাধারণতঃ সর্বভূক। ফল, গাছের শরীরের বিভিন্ন অংশ, ফুল, মাকড়সা, পোকা, গিরগিটি, ছোট ছোট প্রাণী, পাখির ডিম কোন কিছুতে এদের অরুচি নেই। এরা যে বুদ্ধিমান তা এদের খাদ্য সংগ্রহের আর একটি বিশেষ ঘটনা দেখে বোঝা যায়। এরা গাছের শরীরে লম্বা নখ দিয়ে আঁচড় কাটে। এই ক্ষতস্থান দিয়ে ঝরে পরা রস এবং আঠা এরা পরমানন্দে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। একটা মজার বিষয় পর্যবেক্ষণে লক্ষ করা গেছে। এক এক প্রজাতির ট্যামারিন তাদের খাদ্যাভাসের বৈচিত্র্যের কারণে নির্দিষ্ট এক জায়গায় বাস করে। তাই একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির ট্যামারিন বাস করে। কোন একটি জায়গায় একটির বেশি প্রজাতিকে একত্রে দেখতে পাওয়া যায় না।

ট্যামারিনরা উঁচু উঁচু গাছের মাথায় বাস করতে পছন্দ করে। সূর্যের প্রখর তাপের প্রতি এরা খুব সংবেদনশীল, তাই সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এরা ঘন হয়ে জন্মানো পাতার আড়ালে বসে বিশ্রাম নেয়। এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে। এক একটা দলে ৪ থেকে ১৫ জনকে দেখা যায়। এক একটা দল ২৫ থেকে ১০০ একর পর্যন্ত জায়গায় নিজেদের খাদ্য খুঁজে বেড়ায়। পরস্পরের মধ্যে বিভিন্ন রকম শব্দ করে এরা পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করে। এরা সাধারণত আক্রমণাত্মক নয়।

বনের ছোট ছোট জলাশয়ে ভেসে বেড়ানো পোকা খাওয়ার জন্য এরা মাটিতে নামে। সারাদিন এরা খাবারের সন্ধানে নিজেদের এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নিজের বাসায় ফেরে। বড় বড় গাছের ভাঙা কোটরে এরা বাস করে। শরীর থেকে ঝরে পড়া অসংখ্য লোম কোটরের ভিতরটা মোড়ানো থাকে।

লায়ন ট্যামারিনের পূর্ণবয়স্ক হতে লাগে ২ থেকে ৩ বৎসর। পুরুষ প্রজাতি প্রজননক্ষম হয় ১২-১৮ মাসের মধ্যে। কিন্তু নারীরা ২৪ মাসের আগে প্রজননক্ষম হয় না। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস এদের প্রজনন ঋতু। ১২৬ থেকে ১৩০ দিনের গর্ভধারণ শেষে এরা একসাথে দুইটা বাচ্চার জন্ম দেয় (বেশিরভাগ সময়)। বৎসরে দুইবার এরা দুইটি করে বাচ্চা প্রসব করে। ৯০ দিনের মধ্যে শাবকরা নিজে নিজে খাদ্য গ্রহণে সক্ষম হয়ে ওঠে। জন্মের তিন সপ্তাহ পর থেকে বাচ্চা ট্যামারিনের লালন পালনের ভার পুরুষের উপর বর্তায়।

সাধারণত এদের আয়ু ৮-১৫ বৎসর। তবে চিড়িয়াখানায় এদেরকে ১৮-২৪ বৎসর পর্যন্ত বাঁচতে দেখা গেছে।

ঈগল, সাপ, জাগুয়ার সহ বিভিন্ন মাংশাসী প্রাণী এদের অন্যতম শত্রু।

ছবি ও তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, হনলুলু চিড়িয়াখানা এবং অন্য সাইট এক, দুই

1 টি মন্তব্য:

Sabuj Barman said...

Tamarin is a nice animal. Now these animals are generally shown in only Rio De Janeiro in Brazil. They are very gentle animal. We should take some necessary steps to save these animals.

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।