Tuesday, July 1, 2008

প্রবোসিস বানর

প্রবোসিস বানর
Proboscis Monkey

Common Name: Monyet Belanda

Genus: Nasalis
Species: larvatus
(Nasalis larvatus)

এই বানর তার লম্বা, মাংশল ও অদ্ভুত নাকের জন্য বিখ্যাত। এদের গায়ের রঙ হালকা বাদামী। বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বোর্ণিও দ্বীপের উপকূল অঞ্চলে এরা বাস করে। বিপন্ন প্রাণীর খাতায় নাম লিখিয়ে বর্তমানে এরা বিলুপ্তির পথে। বোর্ণিও দ্বীপে তিনটি দেশের অংশ আছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই এর অধিকারভুক্ত বোর্ণিও দ্বীপের নদী কিংবা স্বাদু জলের আশেপাশে ম্যানগ্রোভ বন এবং নিম্নভূমিতে এরা বাস করতে পছন্দ করে। নদীর ৬০০ মিটারের বেশি দূরে এদেরকে কম দেখা যায়।

এরা সাধারণত গাছে থাকে। তবে স্থান পরিবর্তন করার জন্য কখনও কখনও মাটিতে নেমে আসে। এদের সাধারণত সকালবেলায় খাবার গ্রহণ করে থাকে। দিনের বাকী অংশটা গাছের ডালে বিশ্রাম নিয়ে ও ঘুমিয়ে কাটায়। আবার সন্ধ্যা হবার পূর্ব মুহূর্তে খাবার গ্রহণ করা শুরু করে। এদের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন রকমের ফল, বীজ এবং গাছের কচি পাতা। এদের পাকস্থলী কয়েকভাবে বিভক্ত। হজমের কাজ চলার সময় এদের পাকস্থলী প্রচুর গ্যাস তৈরি করে। এর ফলে এদের পেট বেশ মোটা হয়। শরীরে বেশিরভাগ অংশই এদের এই পেট।

এরা ১১-৩২ জনের দলে দলভূক্ত থাকে। তবে কোন কোন দলে ৬০ থেকে ৮০টি বানরকে একসঙ্গে দেখা গেছে। এই বানরদের সবচাইতে দর্শণীয় অঙ্গ হল পুরুষ প্রজাতির নাক। নারী প্রজাতির নাক অবশ্য পুরুষদের মত বড় হয় না। তবে সাধারণ বানরদের চাইতে বড় হয়। পুরুষদের নাক এত বড় হয় যে তা মুখের উপর ঝুলে থাকে। কোন কিছু খাওয়ার সময় হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে হয়। যখন এরা রেগে যায় তখন এই নাক লাল হয়ে যায়।
এরকম অদ্ভূত নাক থাকার কারণ কি তা বিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি। তবে কোন কোন প্রাণীবিজ্ঞানী ধারণা করেন এর সাথে হয়তো প্রজননের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ দেখা গেছে স্ত্রী প্রজাতির বানররা লম্বা নাকওয়ালা পুরুষদেরকে বেশি পছন্দ করে।

পুরুষ বানররা নারী বানরের চাইতে আকারে বড় হয়। গড়ে পুরুষরা লম্বায় প্রায় ২৮ ইঞ্চি বা ৭২ সে.মি. পর্যন্ত হতে পারে। লেজ হতে পারে ৭৫ সে.মি. লম্বা এবং ওজন হতে পারে ২৪ কে.জি. (৫৩ পাউন্ড)। নারীরা হতে পারে ৬০ সে.মি. লম্বা এবং ১২ কে.জি. (২৬ পাউন্ড)।

এরা একবারে একটা বাচ্চার জন্ম দেয়। তাদের গর্ভধারণকাল ১৬৬ দিন। শিশুর মুখের রঙ গাঢ় নীল রঙ এবং শরীরের রঙ কাল হয়। বয়স ৩-৪ মাস হলে এই রঙ পরিবর্তন হয়ে বাদামী রঙের হয়ে যায়। মায়ের সাথে শিশু ১ বৎসর পর্যন্ত থাকে। এরা প্রায় ২০ বৎসর পর্যন্ত বাঁচে।

প্রবোসিস বানর মানুষকে এড়িয়ে চলে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সহ বনের মধ্যে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধির ফলে এদের সংখ্য ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এদের প্রধান শত্রু মানুষ এবং ধূসর চিতাবাঘ। নদীর কুমিররাও এদের শত্রু। নদীতে সাধারণত প্রবোসিস বানররা নামে না। কিন্তু চিতাবাঘের আক্রমণ থেকে বাচার জন্য যখন এরা নদীতে নামে তখন এত সাবধানে নদীতে সাতরায় যে জলে কোন আলোড়নের সৃষ্টি হয় না। কুমিরের হাত থেকে বাঁচার জন্য এরা খুব সাবধানে সাতার কাটতে পারে। এরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে নদীতে নামে। যদি কোন বানর কুমিরের আক্রমণের শিকার হয় তাহলে সবাই মিলে জলের মধ্যে লাফালাফি শুরু করে। ফলে কুমির ভয় পেয়ে যায়।

এরা নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করে খেতে পছন্দ করে। এরা বন্দী অবস্থায় খাদ্য গ্রহণ করে না। তাই এদেরকে চিড়িয়াখানায় দেখা যায় না। তবে এদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ার কারণে সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার চিড়িয়াখানা এদেরকে লালন করার পরিকল্পনা করছে।

তথ্য এবং ছবিসূত্র: সাইট ১, সাইট ২, সাইট ৩, সাইট ৪

1 টি মন্তব্য:

সুশান্ত বর্মন said...

Thank you.

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।