Tuesday, May 6, 2008

বানরের শব্দভাণ্ডার সত্যিই সমৃদ্ধ

হ্যাক হ্যাক হ্যাক পিওউ হ্যাক হ্যাক। এই ধরণের শব্দ আমাদের কানে কোন অর্থ তৈরি করে না। কিন্ত এই শব্দগুলো দিয়ে মোটা-নাক বানর অনেক কথা বলে।

উপরের শব্দগুলি দিয়ে সে বলছে-"আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বানর। আমার নাম মি. এক্স। আমি এই মাত্র একটি ঈগলকে দেখলাম। সে আমাদের মাথার উপরে ঘোরাঘুরি করছে। এখন আমাদের অন্য জায়গায় চলে যাওয়া উচিত।" এক নতুন গবেষণায় এই তথ্যগুলি বের হয়ে এসেছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য বলছে প্রাইমেটরা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশকরার জন্য ভিন্ন ভিন্ন শব্দকে একসূত্রে গাঁথতে পারে।

অন্য প্রজাতির বিভিন্ন আচরণের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা আগেই কিছু কিছু বুঝতে পারতেন। যেমন তিমি ও ডলফিনদের বিভিন্ন আচরণ বোঝা সহজ। কিন্তু এক সাম্প্রতিক গবেষণা মানুষ ছাড়া অন্য প্রাইমেটদের ভাবপ্রকাশের দক্ষতাকে অনেকটা পরিষ্কারভাবে উন্মোচন করতে পেরেছে।

স্কটল্যান্ডের সেইন্ট এন্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক ক্লাউস জুবেরবুহলার বলেন-"আলাদা আলাদা ডাক কোন নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে না। কিন্তু ধারাবাহিক বা পরপর করা ডাকের বা উচ্চারিত শব্দের নির্দিষ্ট অর্থ আছে।"

তিনি বিষয়টির বিশদ ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন-"ধারাবাহিকভাবে 'হ্যাক' 'হ্যাক' করে চিৎকার করার অর্থ হল যে একটি ঈগল পাখি দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কিন্তু এর সাথে যদি মাঝে মাঝে একবার বা দুই বার 'পিওউ' শব্দটা উচ্চারণ করা হয় তাহলে তার অর্থ কিছুটা পাল্টে যায়। তখন তাকে শব্দকারী জায়গা পরিবর্তন করবে এমন মনোভঙ্গির ঘোষনা হিসেবে বুঝতে হবে।

গবেষক ক্লাউস জুবেরবুহলার তার সহকর্মী কেট আর্নল্ডকে নিয়ে প্রাইমেটদের ভাষাভঙ্গি নিয়ে গবেষণা করছেন। নাইজেরিয়ার গাসাকা গুমটি জাতীয় উদ্যানে মোটা-নাক বানরদের বাস। এই বানরেরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। এক একটি দল একজন পুরুষ ও ছয় থেকে নয়টি নারী বানর এবং তাদের বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে তৈরি হয়। এরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিভাবে সতর্ক সংকেত প্রদান করে তা গবেষকদ্বয় বুঝতে পেরেছেন।

গবেষকরা প্রথমে 'পিওউ' শব্দটিকে ভিত্তি করে তাদের অনুসন্ধান পরিচালনা করেছেন। তারা দেখেছেন যখন পুরুষ বানর ধারাবাহিকভাবে 'পিওউ' শব্দটি উচ্চারণ করে তখন তার অর্থ হল 'আশেপাশে কোন চিতাবাঘ আছে'। 'হ্যাক' শব্দটি যদি 'পিওউ' শব্দটির পরে উচ্চারণ করা হয় তাহলে বোঝা যাবে যে আশেপাশে কোন ঈগলের উপস্থিতি তারা টের পেয়েছে। তবে পুরুষ বানরেরা সতর্ক সংকেত দিতে মাঝে মাঝে এই দুটি শব্দকে একসাথে 'পিওউ হ্যাক' বলে ধারাবাহিকভাবে চিৎকার করে।

গবেষকরা GPS ইউনিট ব্যবহার করে নারী বানরদের সাড়া দেয়াকে যাচাই করেছেন। তারা রেকর্ড করা ডাক বাজিয়ে দেখেছেন যে নারী বানররা তাৎক্ষণিকভাবে এই ডাকে সাড়া দেয়। তারা ঈগলের উপস্থিতিজ্ঞাপক সতর্ক ডাক বাজিয়েছিলেন। নারী বানররা এই শব্দ শুনে আর এক মুহূর্ত দেরী করেনি। সঙ্গে সঙ্গে অন্য জায়গায় চলে গেছে। চিতাবাঘের উপস্থিতিজ্ঞাপক সতর্ক ডাক বাজালে বানরেরা সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গলের গভীরে লুকিয়ে পরে। রেকর্ড করা শব্দ শুনেও তারা একই আচরণ করেছে। গবেষকরা 'পিওউ হ্যাক' শব্দদুটোর মিশ্রিত শব্দ তৈরি করে তা বাজিয়ে দেখেছেন যে ফলাফল একই। অর্থাৎ তাদের পর্যবেক্ষণে কোন ভুল ছিল না।

পরিশেষে তারা দলের বাইরের অন্য এক পুরুষ বানরের সতর্ক চিৎকার বাজিয়েছেন। কিন্তু এবারের ফল এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। নারী বানররা ভিন্ন পুরুষের সতর্ক চিৎকারে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। এই শব্দকে তারা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছে। যদিও সতর্ক চিৎকারটি একটি পুরুষ বানরের ছিল তবুও নারী বানরের এই অগ্রাহ্য করার বিষয়টি গবেষকদেরকে চমৎকৃত করেছে। আমরা জানি প্রত্যেকটি শব্দের শব্দতরঙ্গ ভিন্নরকম। এটা বানরেরাও জানে। তারা দলভুক্ত প্রত্যেকটি বানরের স্বর চেনে। নিজের দলের পুরুষের পরিচিত স্বর ছাড়া অন্য দলের পুরুষ বানরের স্বর তাদের কাছে গুরুত্বহীন। এই বিষয়টি তাদের সমাজমনস্কতার চিহ্ন। নিজস্ব পরিচিত বলয়ে তাদের সামাজিক বন্ধন এভাবেই তারা রক্ষা করে।

জুবেরবুহলার ব্যাখ্যা করে বলেন- 'যদি অনাহূত পুরুষ বানরের 'পিওউ হ্যাক' চিৎকারে নারী বানরেরা সাড়া দেয় তাহলে তাদের সামাজিক স্থিতি বলে কিছু থাকে না। এ বিষয়ে তাদের সামাজিকতা সত্যিই প্রশংসাজনক।'

গবেষকদ্বয় নিবিড় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন প্রাইমেটদের অন্যান্য প্রজাতির মধ্যেও ঘটনার প্রেক্ষিতে চিৎকার ও তাতের সাড়া দেয়ার মনোভাব প্রায় একই রকম। গিবন, ক্যাম্পবেলস বানর, অলিভ কলোসাস বানর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রায় একই রকম নিজস্ব ধরণের ভাষা ব্যবহার করে। তাদের স্বরযন্ত্রের দুর্বলতার কারণে হয়তো তারা আরও জটিল কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না, কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে করা কিছু ডাকের উপর তাদের স্বগোত্রীয় কিছু নিজস্ব অর্থ আছে। আর এই নির্দিষ্ট ও বিশেষ অর্থবোধক শব্দের প্রতি দলগতভাবে সাড়া দেয় প্রত্যেক প্রজাতি মেনে চলে। আর এর মাধ্যমে তারা পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করে।

সূত্র: ডিসকভারি নিউজ

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।