Monday, February 11, 2008

সকলকে শুভেচ্ছা

আজ থেকে সন্ধিৎসু ব্লগ লেখা শুরু করলাম। জীবন, প্রকৃতি তথা বিজ্ঞানের স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা থাকবে এই ব্লগে। বস্তুত বিজ্ঞানকে চিনতে সহায়তা করাই আমার উদ্দেশ্য। বিজ্ঞান কি, বিজ্ঞানের স্বরূপ কিরকম, বিজ্ঞানের সীমানা কতদূর কিংবা বিজ্ঞানের সামর্থ্যই বা কতটুকু ইত্যাদি বিষয় পরিষ্কার করার চেষ্টা থাকবে এখানে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়া এই ব্লগের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

আমাদের প্রাত্যাহিক জীবন সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত হলেও আমরা সাধারণ জনগণ বিজ্ঞানকে ঠিক চিনি না। শুধুমাত্র প্রযুক্তিগুলোকে আমরা বিজ্ঞান বলে থাকি। এই অজ্ঞতার কারণ খুব সহজ। আমাদের সমাজে বিজ্ঞানকে পরিচিত করানোর মত পরিবেশও তেমন নেই। শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাও এর আরেকটি কারণ। আমাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় দুমুঠো অন্নের সংস্থান করতে। এই অবস্থায় কোন নতুন কিছু চিন্তা করার অবকাশ কোথায়?

বিজ্ঞান বলতে আমাদের দেশে সাধারণত প্রযুক্তিকে বোঝানো হয়। বিভিন্ন কাজের বা বিনোদনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সক্ষমতাকে বিজ্ঞানে পারদর্শীতা বলে মনে করা হয়। আবার কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিকে আমরা বিজ্ঞানের অবদান বলে সচেতনভাবে মনে করি না। যেমন: হাতুড়ি, হাঁড়ি, নৌকা, বড়শি, লাঙ্গল, দাড়িপাল্লা এমনকি ঘরের কুপিটিও যে বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার ফসল এবং বৈজ্ঞানিক নিয়মের অধীনতা স্বীকার করেই কার্যকরী থাকে আমরা অনেকে কখনও তা ভেবে দেখিনি।
আবার বিজ্ঞান শিক্ষাকে আত্মস্থ করার জন্যও লাগে মুক্ত পরিবেশ। শিক্ষার অন্যতম উপাদান হল প্রশ্ন। সেই প্রশ্ন করতে পারার জন্য লাগে ভীতিহীন মুক্ত পরিবেশ। কিন্তু আমাদের ব্যর্থতা যে, আমরা তেমন পরিবেশ নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করতে পারিনি।
শুধুমাত্র স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত বলে পরিচিতরা পশ্চাৎপদ আচরণ করে তা নয়। শিক্ষিত বলে পরিচিত সুধীজনরাও এর ব্যতিক্রম নন। প্রচলিত শিক্ষাক্রম এর কিছুটা দায়ভার অস্বীকার করতে পারে না। একজন মানবিক বিভাগের ছাত্র বিজ্ঞানের সাধারণ সূত্রগুলো সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায়। নৌকা কেন ভাসে, কূপি কেন জ্বলে, ভাত কিভাবে রান্না হয়, অক্সিজেন কি ইত্যাদি প্রাত্যাহিক জীবন সম্পর্কীয় ব্যাপারগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট, অস্পষ্ট কোনরকমের ধারণা তাদের মধ্যে তৈরি হয় না। বিশ্ব সভ্যতায় গ্যালিলিও, ব্রুনো, হাইপেশিয়া, নিউটন, এডিসন প্রমুখের অবদান সম্পর্কে তারা অন্ধকারে থেকে যায়। বিপরীতে বিজ্ঞানে পড়ুয়াদের অবস্থা খুব একটা উন্নত নয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে বিজ্ঞানে যেহেতু পড়াশোনা করেছে সেহেতু বিজ্ঞানে তার আগ্রহ, দক্ষতা যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা তা নয়। বিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেই যে বিজ্ঞান সচেতন হবে এমন ভাববার কোন কারণ নেই। বরং ক্ষেত্রবিশেষে বিজ্ঞানে পড়ুয়াদেরকে নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। সাহিত্য, ইতিহাস, রাজনীতি, দর্শন, সমাজতত্ত্ব, নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় তাদের পাঠ্য (সিলেবাস) হিসেবে থাকে না বলে তাদের চিন্তাভাবনায় কখনও কখনও গভীরতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। এক বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গী অর্জন করতে খুব কম সংখ্যক বিজ্ঞানের ছাত্র ক্ষেত্রে সফল হয়। এজন্য আমাদের দেশের বিজ্ঞানের ছাত্র, শিক্ষক, পণ্ডিত সমাজ মৌলিক আবিষ্কার তো দূরের কথা, কোন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আজ পর্যন্ত সাধন করে দেখাতে পারেনি। (সীমিতপরিসরে যে দুয়েকটা হয়েছে তা এখানে উল্লেখ্য নয়)। এই দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। অথচ কৃষিকাজের অত্যাবশকীয় যন্ত্র ড্রাম সিডার আমদানী করতে হয়েছে আর একটি ছোট দেশ ভিয়েতনাম থেকে। আসলে সমস্যা আমাদের শিক্ষাদর্শনে, সামাজিক পক্ষপাতিত্বে। আমরা কেন পড়ছি, কি পড়ছি এ সম্পর্কিত ধারণাগুলো আমাদের যথাযথ নয়। এর মধ্যে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতির জায়গা কতটুকু তা আমাদের নিজেদেরকেই খুঁজে নিতে হবে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা দিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে আহৃত জ্ঞানকে। তাহলে যদি উন্মোচিত হয় বিজ্ঞানের স্বরূপ- এই আশাবাদ আমাদের অমূলক নয়- সন্ধিৎসু ব্লগের প্রস্তাবনা এই দৃষ্টিকোণ থেকে। তত্ত্বের বাহুল্য নয়, তথ্যের প্রাবল্য নয়; দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা থাকবে।

ব্লগ ভ্রমণকারী সকলকে শুভেচ্ছা।

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

আপনার প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, ভাবনা, ভিন্নমত প্রকাশ করুন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলে ইমেইল করুন।